বার মাসী শসা চাষ পদ্ধতি/ বার মাসী শসা চাষের উপায়-২০২৪
![]() |
learning official bd |
বীজ বোনার
সময় ও পরিমানঃ এই বীজ বছরের যে কোন সময় বপন করা যায়। তবে অতীব শীতে এই বীজ বপন না
করাই ভালো।একর প্রতি-২০০-৩২৫ গ্রাম।প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ লাগাতে হয়।বীজ একদিন ও
একরাত ভিজিয়ে লাগানো উত্তম।
জমি তৈরিঃ
দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। বার চারেক চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরে
করে নিতে হবে। আগাছা সম্পূর্ন পরিষ্কার করে ক্ষেত সমতল করে নিতে হবে।
মাদা তৈরিঃ
৫০-৮০ সে মি চওড়া ও গভীর গর্ত তৈরী করতে হবে। ২-২.৫ মি দূরে মাদা তৈরী করতে
হবে।বহুয়ে শসার দূরত্ব আরও কম।
সার-ব্যবস্থাপনাঃ
একক প্রতি গোবর ২ টন,খৈল ১১৩ কেজি,টিএসপি ৬০ কেজি,এমপি ৪০ কেজি,ইউরিয়া ৪০ কেজি সার
প্রয়োগ করতে হবে।বীজ বোনার ৭-৮দিন আগে সব সার গর্তের মাটির সাথে মেশাতে হবে।বীজ
বোনার ২০-২৫ দিন পর ইউরিয়া সারের প্রথম অর্ধেক এবং দের মাস পর ইউরিয়া সারের পরের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন
পরিচর্জাঃ শীত ও গরমকালে ৭-১০ দিন অন্তর সেচ দেওয়া প্রয়োজন।বর্ষাকালে পানি
নিষ্কাশনের জন্য নালার বন্দোবস্ত রাখতে হবে।এছাড়াও ৩-৪ সপ্তাহ পর, সব বীজ অস্কুরিত
হলে,মাদা পিছু ৩টা গাছ রেখে,অন্য গাছগুলি তুলে ফেলতে হবে।
পোকা ও
রোগদমনঃগান্ধিপোকা ও বিটল পোকা ( এপিল্যাকনা বিটল ও রেড পামকিন বিটল)ঃ গান্ধিপোকা ও বিটল পোকা গাছের পাতা খায় এবং
ফুলের রস চুষে খেয়ে গাছ দূর্বল করে দেয়।এপিল্যাকনা বিটলের গায়ে কাটাজুক্ত হলুদে রঙ্গয়ের গ্রাব খুব দ্রুত গাছের পাতা
খায়।এসব পোকা দমনের জন্য সাড়ে বার লিটার পানিতে দেড় চা চামচ পরিমাণ ম্যালাথিয়ন ঔষধ
মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকা দূর হবে।
ফলের মাছি
পোকাঃ এই পোকা ফল ছিদ্র করে ডিম পাড়ে এবং পরবর্তীতে ঐ ফলের মধ্যে জন্মায় এবং ফল পঁচে যায়। এই পোকা দমনের জন্য কচি ফল
কাগজ, কাপড় বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
ফল বড় হওয়ার পর যখন খোসা শক্ত
হয়,তখন আর এই পোকা ফল ছিদ্র করতে পারে
না।ক্ষেতে পোকার আক্রমন খুব বেড়ে গেলে সাড়ে ১২ লিটার পানিতে দুই চা চামচ পরিমাণ
ডিপটেরেক্স ঔষধ মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকা দূর হবে।
মাছিপোকা দমনের বিষটোপ তৈরি ও ব্যবহারঃবিষটোপের জন্য ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টি কুমড়া কুচি কুচি করে কেটে থিতলিয়ে ১/২মিলি লিটার (বার
ফোটা) নগস অথবা ডিডিভিপি ১০০ তরল এবং ১০০ মিলিলিটার পানি মিশিয়ে ছোট একটি মাটির পাত্রে রেখে ৩টি খুঁটির সাহায্যে মাটি থেকে ১/২ মিটার উঁচুতে রাখতে হবে। খুঁটি তিনটির মাথায় অন্য একটি বড় আকারের মাটির পাত্র রাখতে হবে। বিষটোপ গরমের দিনে ২ দিন এবং শীতের দিনে ৪ দিন পর্যন্ত রাখার পর তা ফেলে দিয়ে নতুন করে আবার তৈরি করতে হবে। মাছি পোকার সংখ্যা বিবেচনা করে প্রতি হেক্টরে ২০-৪০টি বিষটোপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাউডারিমিলিডিউ রোগ : এই রোগে পাতার উপর সাদা পাউডার দেখা যায় ও গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলন হ্রাস পায়। এই রোগ দূর করার জন্য ২০ গ্রাম থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউপি ১০ লিটার পানির সংগে মিশিয়ে ভাল করে পাতা ভিজিয়ে দিতে হবে। এই পরিমাণ ৫ শতক জমিতে দেয়া যায়। প্রতি বিঘার জন্য ১২০ গ্রাম ঔষধ দরকার হবে।
আনথাকনোজ রোগ : এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে পাতায় হলদে দাগ হয়, পরে দাগগুলো বাদামী বা কালো হয়।পরেঐ অংশ পচে যায়। ফলের বহিরাবরণেও এই বাদামী দাগ দেখা যায় ও ফল পচে যায়। এর প্রতিকারের জন্য বীজ লাগানোর পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হবে।। ১ কেজি বীজ ২.৫ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ নামক ঔষধ দ্বারা ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তাছাড়া ক্ষেতে রোগ দেখা দিলে ডায়থেন ৪৫ গ্রাম ১০ লিটার পানির সংগে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এই রোগ দমনের জন্য ঘরে তৈরী বোর্দ মিশ্রণ আক্রান্ত গাছে ছিটানো যেতে পারে। এক শতাংশ জমির জন্য এই বোর্দ মিশ্রণ তৈরী করতে সাড়ে ১৭ লিটার পানির সাথে ৩৫০ গ্রাম পাথুরে চুন ও অন্য সাড়ে ১৭ লিটার পানির সাথে ৩৫০ গ্রাম তুঁতে আলাদা আলাদাভাবে মাটির পাত্রে মিশিয়ে নিতেহবে। পরবর্তীকালে এই দুই মিশ্রণ পুনরায় অপর এক মাটির পাত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এবং আক্রান্ত গাছে ছিটাতে হবে। ১৫ দিন পর পর এভাবে নতুন মিশ্রণ তৈরী করে ছিটাতে হবে। ফসল তোলার পর গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেললে ভালো হয়।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন : সবুজ থাকতেই শসা তুলে ফেলা উচিত। জমিতে লক্ষ্য রেখে মাঝে মাঝেই শসা তুলে নেওয়া হয়। একবার সংগ্রহ আরম্ভ হ’লে ৪-৫ দিন অন্তর অন্তর ফল তুলতে হয়। শসার ফলন একর-প্রতি-৪-৮ টন।
সাবধানতাঃ ঔষধ ছিটানোর কমপক্ষে ৭ দিন পর্যন্ত কোন ফল বাজারে বিক্রি বা খাওয়া উচিত নয়।
আরো পরুনঃ