মানুষের মুখে দূর্গন্ধ কেন হয়/মুখের দূর্গন্ধ দূর করার উপায়-২০২৪
মানুষের মুখে দূর্গন্ধ কেন হয়/মুখের দূর্গন্ধ দূর করার উপায়-২০২৪।আসালামু আলাইকুম সুধি পাঠক পাঠিকা আশা করি আপনারা সবাই আল্লাহর অসিম কিপায় ভালো আছেন।আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানাবো মানুষের মুখে দূর্গন্ধ কেন হয় এবংমুখের দূর্গন্ধ দূর করার উপায় সম্পর্কে।
ভূমিকাঃ
মানুষের দেহ রহস্যাবৃত। কয়েক ট্রিলিয়ন (১০০ বিলিয়ন=এক ট্রিলিয়ন) ছোট ছোট জীবন্ত
তুলতুলে বস্তু দিয়ে মানুষের শরীর গঠিত।এই তুলতুলে বস্তু গুলোর নাম কোষ।আর প্রত্যেক
কোষের চার পাশে অন্তত ১০ টি ব্যাকটেরিয়া থাকে।আকারে খুবই ছোট হওয়ায় এদের খালি চোখে
দেখা যায় না।একমাত্র শক্তিশালী অনুবিক্ষন যন্ত্রেই এদের দেখা সম্ভব।
অন্য
জিবন্ত প্রানীর মতোই ব্যাকটেরিয়াও খাওয়া দাওয়া করে। বংশ বিস্তার করে এবং পরে মারা
জায়।আমাদের দেহের ঘামের বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ কিংবা নাড়িভুঁড়ির লবণ খেয়ে বেচে থাকে।সেই সজ্ঞে তৈরি
করে একগাদা আবর্জনা।এসব আবর্জনার কারণেই শরীর ও মুখ থেকে বিশ্রি দূর্গন্ধ সৃষ্টি
হয়।
অনেকে মনে করেন এই সব ব্যাকটেরিয়ার ফলেই বার বার দেহ অসুস্থ হয়ে পরে। এই ধারনা পুরোপুরি সত্য নয়। আসলে জন্মের সময়ই মায়ের কাছ থেকে সবার দেহে ব্যাকটেরিয়া চলে আসে।বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া দেহে বছরের পর বছর বসবাস করে কিন্তু কোন ক্ষতি করে না। প্রতিদিন খাবার ও পানির সাথে আমরা অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া খাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে সুস্থতার জন্য এদের প্রয়োজন অপরিসিম।
যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়ার কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয় তাদের বিষয়ে আলোচনা করা হলোঃ
- অয়াকটিনোমাইকোসিস ভিসকোসাসঃ এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে দাতে বাদামি থকথকে প্যাক জমে মুখে দূর্গন্ধ হয়।দাত ক্ষয়ে যায়। যন্ত্রপাতি দিয়ে দাতের চিকিৎসক যখন প্যাক তোলেন, তখন তিনি আসলে মুখে বাস করা এই ব্যাকটেরিয়া দের আক্রমন করে।
- ই কোলাইঃ এ অনুজীবের বাস নাড়িভুঁড়ির ভেতরে।এরা সব সময়ই কাজে ব্যাস্ত থাকে।উপকারি ই কোলাই আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এর যোগান দেয়। আর ক্ষতিকার ই কোলাই এর কারণে সারাদিন বমি হতে পারে।
- মিথেনোজেনসঃ বিশ্বের অর্ধেক মানুষের নাড়িভুঁড়িতেই এই অনুজীব বাস করে।মানুষ সহ সব প্রাণীদেহে এরা মিথেন গ্যাস তৈরি করে। পেটের এই গ্যাস বাইরে বের হলে দূর্গন্ধ বের হয়।
- ব্রেভিব্যাকটেরিয়া লিলেনসঃ এ বিশ্রি গন্ধের অনুজীবগুলো থাকে ঘামের মধ্যে।এদের কারণে জুতা খুললেই বক করে নাকে দূগন্ধ লাগে।
মুখের দূর্গন্ধ দূর করার উপায়ঃ
- নিয়ম করে অন্তত দুই বেলা ভাল করে দাত মাজতে হবে।সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে মেস-ওয়াক করা বা আজ্ঞুল দিয়ে দাত মেজে নেওয়া।অতপর নাশ্তার পর ভাল করে ব্রাশ করা।সম্ভব হলে তিন বেলা খাওয়ার পর ব্রাশ করা। এতে খাবারের কোন অংশ মুখে লেগে থাকবে না এবং দূর্গন্ধ হবে না।
- দাত ও মাড়ির পরিচর্জা ঠিক মত করা। এক্ষেত্রে বছরে একবার হলেও স্কেলিং করে দাত পরিস্কার করা উচিত। এতে দাতের স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে এবং মুখে দূর্গন্ধ হবে না।
- দাত মাজার সঠিক নিয়ম জানতে দাতের চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নেওয়া।অনেক সময় দুই তিন বার ব্রাশ করেও লাভ হয় না ।এর কারন হলো দাত মাজার সঠিক নিয়ম না জানা।সঠিক নিয়ম না জেনে ব্রাশ করলে উপকারের থেকে ক্ষতিই বেশি হয়। তাই দাত মাজার সঠিক নিয়ম জানাটা জরুরি।
- খাবার পর গরম পানির সাথে লবন বা পরিমাণ মত ফিটকিরি মিশিয়ে কুলি করা।অন্তত ঘুমানোর আগে এপদ্ধতি গ্রহন করলে মুখে কোন ইনফেকশন বা দূর্গন্ধ হবে না।
- মাউথ অয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে পরিমানে কম ব্যবহার করতে হবে। অধিক ব্যবহার করলে মুখে এক ধরনের ছত্রাক জন্মানোর সম্ভবনা থাকে।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবু, পেয়ারা,আমলকী খাওয়া।খাবার তালিকায় ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার রাখা ভালো।
- গ্রীন টি পান করা।গ্রীন টি পান করলে মুখে ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে বাধা প্রদান করে।
- দুধ পান করা।খাদ্য গ্রহনের আগে দুধ পান করলে মুখের দূর্গন্ধ ভাব দূর হয়। বিশেষ করে তেল- মসলা জাতীয় খাবার খাওয়ার আগে দুধ বেশি কার্জকর।
- মুখে আদা রসুনের গন্ধ হলে সামান্য সরিষার তেলের সাথে অল্প লবণ মিশিয়ে দাতের মাড়ির সাথে ম্যাসেজ করার ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে মুখে দূর্গন্ধ কম হয়।
পরিশেষেঃঅন্যান্য রোগের মত মুখের দূর্গন্ধ দূর করার জন্য সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।তবে সাধারন ভাবে খাবার পরে বেশি করে পানি পান করা। এবং ভাল ভাবে কুলি করা ও জিব্বা পরিষ্কার করা।এবং উপরোক্ত নিয়ম মেনে চললে মুখের দূর্গন্ধ দূর করা সম্ভব।
আরো পরুনঃ
দূর্নিতি ও কোটা সংস্কার আন্দোলন
ভারতকে রেল ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ কি পাবে