ইসলাম ধর্মে স্ত্রী নির্বাচনে নিয়তের গুরুত্ব/পাত্রী নির্বাচনে ইসলামের নির্দেশনা- ২০২৪
ইসলাম ধর্মে স্ত্রী নির্বাচনে নিয়তের গুরুত্ব/পাত্রী নির্বাচনে ইসলামের নির্দেশনা-২০২৪ আসালামু আলাইকুম সুধি পাঠক পাঠিকা আশা করি আপনারা সবাই আল্লাহর অসিম কিপায় ভালো আছেন।আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানাবো ইসলাম ধর্মে স্ত্রী নির্বাচনে নিয়তের গুরুত্ব।
সূচনাঃ ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া (রহ:) বলেন, একদিন আমি আবু সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না (রহঃ) এর কাছে ছিলাম। এমন সময় এক লোক এসে তাকে নিজ স্ত্রী সম্পর্কে বলল, হে আবু মোহাম্মাদ! ঐ নারীর ব্যাপারে আমার অভিযোগ আছে।আমি যেন তার কাছে সবচেয়ে লাঞ্চিত ও সবচেয়ে তুচ্ছ।তার কথা শুনে আবু সুফিয়ান (রহঃ) কিছুক্ষন মাথা নিচু করে থাকলেন। এরপর মাথা তুলে বললেন, হয়ত তুমি তাকে আশায় বিবাহ করেছো যে, তোমার সম্মান বূদ্ধি পাবে? লোকটি বলল, জী, আবু মোহাম্মাদ!সুফিয়ান বললেন, যে সম্মান বাড়াতে চায়,সে লাঞ্চনা দ্বারা পরিক্ষিত হয়।আর যে সম্পদ বাড়াতে চায় সে দারিদ্র্য দ্বারা পরিক্ষিত হয়।আর যে দ্বীনদার হতে চায়, আল্লাহ তাকে দ্বীনদারির সাথে সম্মান ও সম্পদ উভয়টা দান করেন।
এরপর আবু সুফিয়ান ঘটনা বলতে শুরু করলেন,আমরা ছিলাম চার ভাই।মুহাম্মাদ, ইমরাম,ইব্রাহিম ও আমি। মুহাম্মাদ সবার বড়। ইমরান সবার ছোট।আমি ছিলাম মেজ। ্মুহাম্মাদ বিবাহ করতে চাইলেন, তিনি বংশমর্জাদাসম্পন্ন মেয়ে খুঁজলেন। এরপর নিজের চেয়ে বেশি বংশমর্জাদা সম্পুন্ন একজন কে বিবাহ করলেন।আল্লাহ তায়ালা লাঞ্চনা দ্বারা পরিক্ষা করলেন।ইমরান বিয়ের ক্ষেত্রে সম্পদের প্রতি আগ্রহী হলেন। তাই সে নিজের চেয়ে বেশি ধন সম্পদশালী মেয়ে বিয়ে করলেন।আল্লাহ তায়ালা ইমরানকে দারিদ্র্য দ্বারা পরিক্ষা করলেন। সবাই তার কাছ থেকে নিল, কিন্তু তাকে কেউ দিল না।অবশেষে নারীর কার্জাদি পরিচালনার জন্য আমিই বাকি থাকলাম।
একবার আমাদের বাসায় মামার ইবনে রাশীদ (রহঃ) আসলেন।আমি তার সাথে বিয়ের ব্যাপারে পরামর্শ করলাম।তার কাছে আমার ভাইদের ঘটনা খুলে বল্লাম।তিনি আমাকে রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) দুটি হাদীস শুনিয়ে দিলেন। যেখানে তিনি বলেছেন,"নারীদের বিবাহ করা হয় চারটি জিনিস দেখে।তার ধন-সম্পদ,বংশ-মর্জাদা,রূপ-সৌন্দর্জ এবংদ্বীনদার দেখে।তুমি দ্বীনদার মেয়ে দেখে বিয়ে করে সফল হও ।অন্যথা তোমার উভয় হাত ধুলি ধূসরিত হোক" (বুখারি হা/৫০৯০; মুসলিম হা /১৪৬৬)। অন্যত্র আয়েশা (রাঃ) এর বর্ণানায় রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে নারীর ভরন পোষন যত সহজ, সে নারী তত বরকতময় ( আহমাদ হা/২৫১৯, সনদ জঈব) ।
এরপর আমি নিজের বিয়ের জন্যে রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) এর সুন্নাতকে পাত্রী বাছাইয়ের মাপকাঠি নির্ধারন করলাম। দ্বীনদার ও ভরণপোষণ সহজ হয় এমন নারী কে বিয়ে করলাম। অবশেষে আল্লাহ আমাকে দ্বীনের সাথে সম্মান ও সম্পদ উভয়ই দান করলেন ( আবু নু'আইম, হিলাইয়াতুল আওলিয়া ৭/২৮৯)।
শিক্ষাঃ
- বান্দা তার ভালো নিয়তের প্রতিদান দুনিয়াতেই পেয়ে থাকেন,ঠিক যেমন মন্দ নিয়তের পরিণতি দুনিয়াতেই ভোগ করে।আর পরকালীন প্রতিদান তো আছেই।
- দ্বীন ও দুনিয়ার সকল কাজে নিয়তের প্রতি যত্নশীল হওয়া মুমিনের কর্তব্য।
- পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে অবশ্যই দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।কেননা দ্বীনদার ব্যাক্তির মধ্যেই দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ নিহিত থাকে।নতুবা দুনিয়াতেই এর ফল ভোগ করতে হবে।যার বেশুমার নজীম আমাদের আশেপাশে বিদ্যমান।
- জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) এর আর্দশের অনুসরণে রয়েছে মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের নিশ্চয়তা।
- যে কোন সমস্যায় বিজ্ঞ ও দ্বীনদার আলেমের পরামর্শ নেওয়া উচিত।কেননা উম্মতের প্রতিটি ব্যাক্তির জন্য তারাই সর্বাধিক কল্যাণকামী।
- সজ্ঞী ও বন্ধু নির্বাচনেও দ্বীনকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।সম্পর্ক স্থাপনে ধন সম্পদ প্রাধান্য পেলে ঈমান আমল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।পাশাপাশি পার্থিব মান মর্জাদা হ্রাস পায়।